ঢাকা,বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪

কক্সবাজার ঘোষণায় সমাপ্ত বাংলাদেশ-ভারত সংলাপ

নিজস্ব প্রতিবেদক, কক্সবাজার :: ‘কক্সবাজার ঘোষনার’ মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে দুই দিনের ‘বাংলাদেশ-ভারত বন্ধুত্ব সংলাপ’। সংলাপে উভয় দেশ বিশ্বের জন্য এমন একটি ‘কৌশলগত অবস্থান‘ তৈরী করার ঘোষনা দিয়েছে, যেখানে ভীতি থেকে মুক্তি এবং ভবিষ্যতের প্রজন্মের জন্য চিন্তা ও বাকস্বাধীনতার ক্রমশ আরও স্বাচ্ছন্দ্য পরিবেশ নিশ্চিত হবে। এছাড়াও কৌশলগত অবস্থান থেকে প্রয়োজনীয় মানবাধিকার এবং মানবাধিকারের মূল মূল্যবোধের উপর ভিত্তি করে, সার্বভৌমত্ব, ধর্মনিরপেক্ষতা এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় একযোগে কাজ করার বিষয়ে একমত পোষন করা হয়েছে কক্সবাজার ঘোষণায়।
ঘোষণাপত্রে বাংলাদেশ-ভারত দ্ইু প্রতিবেশী দেশের মধ্যে বিনিয়োগ এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি করার লক্ষ্যে নানা পরিকল্পনার কথা বলা হয়েছে। এছাড়াও তথ্য প্রযুক্তি, বিদ্যুৎ, জ্বলানী খাত, জলবায়ু পরিবর্তন জনিত সংকট মোকাবেলায় ও আঞ্চলিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সমন্বিত পরিকল্পনা সহ সম্ভাবনাময় আরো বিভিন্ন খাতের সার্বিক উন্নয়নে নানা পদক্ষেপ গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে।
শনিবার সন্ধ্যায় কক্সবাজারের উখিয়ার ইনানীর একটি তারকা হোটেলে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ-ভারত নবম বন্ধুত্ব সংলাপের সংলাপের সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন। এসময় তিনি রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে মিয়ানমারের উপর চাপ সৃষ্টি করার জন্য ভারতকে কার্যকর ভূমিকা রাখার আহবান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘১১ লাখ রোহিঙ্গা চরম নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। তাদেরকে আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশ মানবিকতার অনন্য নজির স্থাপন করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই মানবিকতা সারা বিশ্বে প্রশংসিত হয়েছে। বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গার এই বোঝা আমরা দীর্ঘদিন ধরে বহন করতে পারিনা। এই সমস্যা আমাদের একার নয়। সুতরাং এই সমস্যা সমাধানে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ ও ভারত এক সাথে কাজ করছে। বাংলাদেশ সকল ধরণের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে। তাই কোন সন্ত্রাসী গোষ্ঠি বাংলাদেশের ভূমিতে স্থান পাবে না।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ভারত নবম ফ্রেন্ডশীপ সংলাপ দু’দেশের বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্যে ভারসাম্য আনার ক্ষেত্রে কাজ করার সুযোগ রয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের সাথে ভারতের সম্পর্ক গভীর এবং বিশ্বাসের। যার সূচনা ১৯৭১ সালে বাংলদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে। দুই দেশের সুদীর্ঘ এই সম্পর্ক আমাদের আগামীতে আরো গভীর হবে।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে টেকনো ইন্টারন্যাশরাল কলেজ অব টেকনোলজির পরিচালক ড. রাধা তমাল গোস্বামী বলেন, বাংলাদেশ-ভারতের উন্নত সম্পর্কের বহি:প্রকাশ সম্প্রতি ত্রিপুরায় গ্যাস সরবরাহ ও মংলা এবং চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারের অনুমতি দেয়া। সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ দমনে বাংলাদেশ সরকারের জিরো টলারেন্স নীতিতে ভারত সরকার খুবই খুশি। তথ্য প্রযুক্তি, বিদ্যুৎ, জ্বলানী খাত, আঞ্চলিক অর্থনীতি ও নিরাপত্তাসহ সব দিকের উন্ন্য়নে আমরা এক সাথে কাজ করবো।
ভারতের রাজ্যসভার বিধায়ক ও প্রখ্যাত সাংবাদিক এম জে আকবর বলেন, ‘চলমান সময়ে দু’দেশের সম্পর্ক বিশেষ বন্ধুত্বপূর্ণ, যা গত ২৫ বছরের চেয়ে ভিন্ন। বাংলাদেশ সব দিক দিয়ে দ্রুত এগুচ্ছে। প্রতিবেশী হিসেবে দু’দেশের সম্পর্ক আরো বন্ধুত্বপূর্ণ রাখা দরকার। দু’দেশের উপর দিয়ে বয়ে চলা নদীগুলোর যতœ নিয়ে দু’দেশের জনসাধারণের উপকারে ব্যবহারের উপযোগী রাখা জরুরী। এতে অর্থনৈতিক ভাবে দু’দেশই লাভবান হবে। এ ধারা অব্যহত রাখতে আমদানি-রপ্তানি বাড়াতে কাজ করা জরুরী।’
সমাপনী সমাপনি অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কীত সংসদসীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি লে. কর্নেল (অব:) মোহাম্মদ ফারুক খান এমপি। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন ভারতের রাজ্যসভার সদস্য এম জে আকবর, বাংলাদেশের সংসদ সদস্য নাহিম রাজ্জাক ও আশেক উল্লাহ রফিক, ফ্রেন্ডস বাংলাদেশ ইন্ডিয়ান চ্যাপ্টারের সভাপতি ড. রাধা তমাল গোস্মামী, বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন ফর নিজিওনাল স্টাডিজ এর চেয়ারম্যান এবং ফ্রেন্ডস বাংলাদেশ এর প্রধান সমন্বয়ক আ স ম শামছুল আরেফিন। এই সংলাপে ভারতের ২৬ জন এবং বাংলাদেশের ৫৪ জন প্রতিনিধি অংশ নিয়েছেন।

পাঠকের মতামত: